হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) ইসলামের অন্যতম প্রধান সাধক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি গাউসুল আজম বড় পীর হিসেবেই সকলের নিকট পরিচিত। প্রিয় শিক্ষার্থী, আমরা আজ ইসলামের এ মহান সাধকের জীবনাদর্শ সম্পর্কে জানব।
জন্ম ও বংশ পরিচয়
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) হিজরী ৪৭০ সালে রমযান মাসের ১ তারিখ মোতাবেক ১০৭৭ খ্রিস্টাব্দে পারস্যের জিলান শহরে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মভূমি জিলানের নামানুসারেই তাঁকে জিলানী বলা হয়। তাঁর উপাধি গাউসুল আযম, মুহিউদ্দিন বা দীনের পুনরুজ্জীবক ইত্যাদি। তাঁর পিতা আবু সালেহ মুসা জঙ্গী এবং মাতা উল খায়ের ফাতিমা। তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.) -এর বংশধর ছিলেন।
ব্যতিক্রমী শৈশব
শৈশবে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর মধ্যে শিশুসুলভ চাঞ্চল্য ছিল না। তিনি ছিলেন শান্ত, নম্র, ভদ্র ও স্থির স্বভাবের অধিকারী। জনশ্রুতি রয়েছে যে, তিনি মায়ের কোলে থাকতে শুনেশুেনে ১৮ পারা কুরআন মাজিদ মুখস্থ করে ফেলেন। সাত বছর বয়স থেকে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে শুরু করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনের পর তিনি ১৮ বছর বয়সে বাগদাদের বিশ্ববিখ্যাত নিজামিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এখান থেকে তিনি তাফসির, হাদিস, ফিকহ, আরবি সাহিত্য, ইতিহাস ও আকিদা বিষয়ে গভীর পাণ্ডিত্য লাভ করেন।
সত্যবাদিতা
তিনি সদা সত্য কথা বলতেন, কখনো মিথ্যা বলতেন না। তিনি পড়াশুনার জন্য ব্যবসায়ী কাফেলার সাথে বাগদাদ আসার পথে একটি ডাকাত দলের কবলে পড়েন। ডাকাত সর্দার অন্যদের সবকিছু নিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার সাথে কি আছে? তিনি বললেন, আমার নিকট ৪০টি স্বর্ণ মুদ্রা আছে। ডাকাত সর্দার আশ্চার্যান্বিত হয়ে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন হে যুবক। তুমি তো মিথ্যা কথা বলে আমার নিকট থেকে স্বর্ণ মুদ্রা লুকাতে পারতে? তখন হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) বললেন, আমার মা মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করেছেন। তাঁর এ সত্যবাদিতা দেখে ডাকাত দলের মনে পরিবর্তন আসল এবং তারা সবাই তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে এ পাপের পথ ছেড়ে দিলো এবং পুন্যের পথে তাদের জীবন পরিচালনা শুরু করল।
অধ্যাত্মিক সাধনা ও ইসলাম প্রচার
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) একজন মহান সাধক ছিলেন। তিনি তৎকালীন শ্রেষ্ঠ সুফিসাধক হযরত হাম্মাদ (র.)-এর নিকট সুফিতত্ত্বে জ্ঞানলাভ করেন। তিনি একটানা ২৫ বছর মুরাকাবা-মুশাহাদা ও কঠোর আধ্যাত্মিক সাধনায় নিয়োজিত থাকেন।
তিনি জীবনের বাকী সবটুকু সময় ইসলামের সেবায় নিয়োগ করেন। তিনি বিভিন্ন জনসভার আয়োজন করে বক্তৃতা ও উপদেশ দিতে থাকেন। মুসলমানদের পাশাপাশি অমুসলিমরাও তাঁর সভায় আসতেন। তাঁর দাওয়াতে প্রায় ৫ হাজার অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে তিনি তাঁর শিষ্যদের নিয়ে একটি মুবাল্লিগ দল তৈরি করেন। তাদের দাওয়াতে বিমোহিত হয়ে সুদান, নাইজেরিয়া, চাদ, ক্যামেরুনের অসংখ্য মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি প্রায় এগারোটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি আরবি ও ফার্সি ভাষায় কবিতা রচনা করেন।
ইবাদাত
হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কঠোর সাধনা করতেন। প্রতাহ কুরআান মার্জিন তিলাওয়াত করতেন; রাতের অধিকাংশ সময় জিকির ও ইবাদাত বন্দেগীতে কাটাতেন। নিষিদ্ধ পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছরই তিনি রোযা পালন করতেন।
অসহায়দের সাহায্য
তিনি গরীব-দুঃখী ও অসহায় মানুষের সেবা করতেন; তাদেরকে অকাতরে দান করতেন। তাঁর শিক্ষাজীবনে একবার বাগদাদে অভাব দেখা দেয়। তিনি তাঁর সকল স্বর্ণমুদ্রা গরীব-দুঃখী ও অসহায় মানুষকে দান করে দেন। এবং নিজে না খেয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি নিজে পেটপুরে খাওয়া আর প্রতিবেশি অনাহারে থাকাকে অপছন্দ করতেন।
মৃত্যু
ইসলামের এ মহান সেবক ৯০ বছর বয়সে ৫৬১ হিজরী সনের ১১ রবিউসসানি ইন্তেকাল করেন। বর্তমান ইরাকের বাগদাদ শহরে তাঁর মাজার রয়েছে।
এ পাঠ থেকে আমাদের জন্য শিক্ষণীয়:
দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.)-এর জীবনাদর্শ থেকে নিজেদের জন্য পালনীয় কাজের একটি তালিকা তৈরি করবে। |
---|
প্রতিবেদন রচনা
আদর্শ জীবনচরিত অধ্যায় থেকে আমরা যা কিছু শিখলাম এবং যে সকল কাজ করলাম সেগুলো মিলিয়ে আমাদের এবার একটি বড় কাজ করতে হবে। এবার আমরা নিজেরা ঠিক করব যে আমরা এসকল আদর্শ জীবনচরিত থেকে কি শিক্ষা লাভ করলাম এবং সেগুলো কোন কোনটি আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে চাই। অর্থাৎ এখন তোমাকে ভেবে দেখতে হবে, মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সা.), হযরত আবু বকর (রা.), হযরত খাদিজা (রা.), ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এবং হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর জীবন সম্পর্কে তুমি যা যা জেনেছো তার মধ্যে থেকে কি কি কাজ তুমি তোমার জীবনে চর্চা করতে চাও। তাহলে এখন তোমার কাজ হলো-
কাজ-১৫; জীবনাদর্শ থেকে তুমি অনুসরণ করতে চাও এমন দিকগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রভুত করো। |
---|
অর্থাৎ আমাদের এখন ঠিক করতে হবে যে, জীবনীগুলো থেকে আমরা যা যা জানলাম সেগুলোর মধ্যে থেকে বিশেষ কোনগুলোর প্রতিফলন আমরা আমাদের জীবনে দেখতে চাই। সেই দিকগুলোকে তুলে নিয়ে আমরা এবার একটি প্রতিবেদন তৈরি করব এবং শিক্ষককে দেখিয়ে নিয়ে নিজের কাছে রেখে দিবো। যা যা লিখেছি সেই অনুসারে আমরা এবার আমাদের জীবনকে পরিবর্তনের চেষ্টা করব। সময়ে সময়ে আমরা আমাদের এই প্রতিবেদনের লেখার সাথে মিলিয়ে দেখব যে যা যা অনুসরণ করতে চেয়েছিলাম সেগুলো আসলেই অনুসরণ করতে পেরেছি কিনা। না পেরে থাকলে সেগুলো আবার নতুন করে চর্চা শুরু করব।
আরও দেখুন...